ফারুক আহমেদ, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি : শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন কলেজ ছুটি থাকার সুযোগে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কমলাপুর জি.কে আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলী’র যোগ-সাজসে কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে দুই লক্ষাধীক টাকা মেহগিনিসহ বিভিন্ন প্রজাতীর ছোট-বড় ৩৭টি গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলী ও গভনিং বডির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী ও এলাকাবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। মিডিয়া কর্মীদের পদচারনা ও ফোনে অতিষ্ঠ হয়ে অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলী মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দেন। পরবর্তিতে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বিষয়টি জানতে পেরে জিবি’র জরুরী মিটিং আহবানের জন্য অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষ নিজের দোষকে আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে গত ০২ ফেব্রুয়ারি জিবি’র জরুরী মিটিং আহবান করেন। গাছ কাটার বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় অধ্যক্ষকে বাদী হয়ে গভনিং বডির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে মাগুরা আদালতে মামলা করার বিষয়ে জিবির সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় । ৪ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলী বাদী হয়ে সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে ৩৭টি গাছ কাটার অভিযোগে মাগুরার শ্রীপুর আমলী আদালতে একটি মামলা দাখিল করেন। এজাহারে ৩৭টি গাছের মূল্য ৮০ হাজার টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে এর মূল্য দু’লক্ষাধীক টাকা। ১৫ হাজার টাকা লেনদেনের বিনিময়ে অধ্যক্ষ এই গাছগুলি কাটার জন্য সদস্য ইলিয়াসকে অনুমতি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের দায়ভার এড়াতে তিনি এখন সবই অস্বীকার করছেন । অধ্যক্ষের বসত-বাড়ির অদূরেই কলেজটি অবস্থিত তাছাড়া কলেজে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রহরীরা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এরপরও অধ্যক্ষ গাছ কাটার বিষয়টি না জানার ভান করছেন। তাঁরই যোগ-সাজসে কালো টাকা লেনদেনের মাধ্যমে গাছকাটা হলেও তিনি এখন রয়েছেন অধরায়। নিজেকে রক্ষা করতে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নামেমাত্র মামলা করেছেন তিনি । কোনো প্রতিষ্ঠানের গাছপালা কাটতে হলে বেশকিছু সরকারি বিধিবিধান অনুসরণ করতে হয়। অথচ সরকারি বিধিবিধান ও নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করেই কলেজ কর্তৃপক্ষ গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন, যেটা আইনের পরিপন্থী ।
এ বিষয়ে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ডাঃ নুরুজ্জোহা বলেন, কলেজের দক্ষিণ পাশের কিছু মরা ও আগাছা জাতীয় কিছু গাছ অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কিন্ত কমিটির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস দক্ষিণ পাশের গাছ না কেটে উত্তর পাশের বেশকিছু গাছ কেটে নিয়েছেন । এটা তিনি গায়ের জোরে করেছেন এবং ঠিক করেননি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য অধ্যক্ষকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলী বলেন,যেহেতু গাছটি কেটেছে শুক্রবার ছুটির দিন সেহেতু তাঁর এ বিষয়ে জানার কথা নয়। তবে তাকে ফোনে অবগত করা হয়েছিল এবং তিনি বলেছেন কমিটির রেজুলেশনের বাইরে যেন কোনকিছু না করা হয় । তারপারও কমিটির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস দক্ষিন পাশের গাছের সাথে উত্তর পাশের গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছেন। যেটা তার কাটার কথা নয় । এছাড়াও তাঁর সাথে সদস্যের কোন প্রকার টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি বলেও অস্বীকার করেন।
কলেজ গভনিং বডির সদস্য ইলিয়াস বিশ্বাস গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন যে, কমিটি রেজুলেশনের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এস এম নায়েব আলীকে গাছ কাটার বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অধ্যক্ষ তাকে ডেকে নিয়ে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গাছগুলি তাঁর কাছে বিক্রি করেছিলেন। সে মোতাবেক তাকে জানিয়েই গাছগুলি কেটেছেন। গাছ কাটার অনুমতি পাওয়ার পরও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হয়েছে বলেও দাবী করেন। তিনি সুষ্টু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদেও শাস্তি দাবী করেন।
Leave a Reply